কিভাবে বাংলাদেশ থেকে ইউএস বিজনেস রেজিস্টার করবেন?

বাংলা ব্লগব্যবসা১৪ মে, ২০২০

কিভাবে বাংলাদেশ থেকে ইউএস বিজনেস রেজিস্টার করবেন?

বাংলাদেশ থেকে অনলাইন বেজড ওভারসিজ বিজনেস করা প্রায় অসম্ভব। প্রোডাক্ট সেল হোক আর সার্ভিস সেল হোক, বাংলাদেশ থেকে ভালো বিজনেস মডেল সাজানো প্রায় অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব।

বাংলাদেশ থেকে অভারসিজ বিজনেস করার অনেকগুলা সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পেমেন্ট রিসিভ। 2CO ছাড়া বড় কোন পেমেন্ট গেটওয়েই বাংলাদেশ সাপোর্ট করে না। 2CO তেও রয়েছে নানা-রকমের লিমিটেশন এবং রেস্ট্রিকশন। শুধুমাত্র পেমেন্ট গেটওয়ে সমস্যার কারনে অসংখ্য উদ্যোক্তা তাদের বিজনেস শুরু করতে পারে না। আমি নিজেই অনেকগুলা বিজনেস আইডিয়া বাদ দিয়েছিলাম শুধুমাত্র পেমেন্ট গেটওয়ে সমস্যার জন্য।

সত্যি বলতে বাংলাদেশে কবে পেমেন্ট গেটওয়ে সমস্যার সমাধান হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তার জন্য তো বিজনেস আইডিয়াকে বসিয়ে রাখা যাবে না। তাছাড়া বিজনেসের কাস্টোমার টার্গেট যদি ইউএস হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশে বিজনেস সেটাপ করা বোকামি। কারন পেমেন্ট গেটওয়েগুলো ক্রস বর্ডার পেমেন্টের জন্য ১% করে এক্সট্রা চার্জ করে। সুতরাং, আমার বিজনেস যদি ইউএস এ তে রেজিস্টার্ড হয়, সেখত্রে ইউএস পেমেন্টগুলোকে লোকাল পেমেন্ট হিসেবে কাউন্ট করা হবে, আর ১% সেভ হয়ে যাবে।

অনেকদিন ধরে পেমেন্ট গেটওয়ের অপেক্ষায় থেকে, গতবছর থেকে রিসার্চ শুরু করেছিলাম কিভাবে ইউএস বিজনেস রেজিস্টার করা যায় ঘরে বসে থেকে। এবং অবশ্যই অল্প খরচে। অনেক যায়গায় সল্যুশন পেয়েছি, বাট সবযায়গায় একটা না একটা সমস্যা থাকেই। সবচেয়ে বেশীবার যেই সমস্যাটার নাম শুনেছি, সেটা হলো ব্যাংক একাউন্ট। বেশীরভাগ যায়গায় শুনেছি যে, ব্যাংক একাউন্ট করতে আমাকে ফিজিক্যালি প্রেজেন্ট থাকতে হবে। মাথার মধ্যে আমেরিকা যাওয়ার ভুতও চেপে বসেছিলো সবযায়গায় এক কথা শুনে। তারপর এটারও সমাধান বের করলাম, বাংলাদেশে থেকেই ব্যাংক একাউন্ট করা যাবে।

এরপর রিসার্চে নামলাম ট্যাক্স নিয়ে। ট্যাক্স ব্যাপারে ইউএস হলো খিচুরির দোকান। দুনিয়ার নিয়ম, আলাদা আলাদা স্টেটে আলাদা আলাদা নিয়ম। এক স্টেটে ২০% ট্যাক্স আবার আরেক স্টেটে ২%। মাথা নস্ট হয়ে যাচ্ছিলো, ট্যাক্স বিষয়টা বুঝতে। সবশেষে ডিসাইড করলাম যে, বিজনেস রেজিস্টার করবো Wyoming স্টেটে এবং LLC বিজনেস রেজিস্টার করবো।

Wyoming LLC

Wyoming এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে কর্পোরেট ইনকাম ট্যাক্স নেই। আর ফাইলিং ফিও অনেক কম। নন-রেসিডেন্ট এলএলসি এর জন্য আমার মতে এটাই বেস্ট স্টেট। Wyoming এ পার্সোনাল ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় LLC বিজনেসের জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে রেজিস্টার করলে এবং কোন ফিজিক্যাল প্রেসেন্স না থাকলে জিরো ইনকাম ট্যাক্সের মজা পাবো আমরা। ইউএস এবং বাংলাদেশের মধ্যে Bilateral Taxation Treaties এগ্রিমেন্ট থাকার কারনে বাংলাদেশি (উই আর নট স্পেশাল, অনেক দেশের সাথেই এই এগ্রিমেন্ট আছে) উদ্যোক্তার Wyoming LLC বিজনেস থেকে আয়ের উপর Wyoming গভার্নমেন্ট কোন ট্যাক্স ধরবে না। আপনাকে ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে বাংলাদেশে। সুতরাং, ট্যাক্সের চিন্তা শেষ।

ব্যাংক একাউন্টঃ

আগেই বলেছি ব্যাংক একাউন্টের সমাধান পেয়ে গেছি। mercury.co একটা অনলাইন ফোকাসড ব্যাংক, এবং অনলাইন বিজনেসকে টার্গেট করে অপারেট করা হয়। ব্যাংকিং এর যাবতীয় সকল কাজ এটাতে অনলাইনে করা যায়। লোকাল ট্রান্সফার, ইন্টার-ন্যাশনাল ওয়্যার ট্রান্সফার, কার্ড ইস্যু, সবই অনলাইন। আরেকটা প্লাস পয়েন্ট হলো, ফিজিক্যাল কার্ড তো দিবেই, তাছাড়াও এটাতে ইজিলি ভার্চুয়াল কার্ড ইস্যু করা যায়। সো কার্ড ইনফো লিকের আর কোন ভয় নেই, কয়েকদিন পর পর কার্ড রিমুভ করে নতুন কার্ড ইস্যু করে নিলেই হলো। আর আনন্দের সংবাদ হলো, এটাতে কোন মেইন্টেনেন্স ফি নেই।

ব্যাংকের ব্যাপারেও অনেক ঘেটেছি এবং আমি এদের কাছে আমার ডলার রেখে ঘুমাতে পারি। এদের সম্পর্কে গুগল করে দেখতে পারেন।

বিজনেস রেজিস্ট্রেশনঃ

ফাইনালি ডিসাইড করলাম, এবার তাহলে বিজনেস সেটাপ করা যাক। এখন কোন এজেন্সিকে দিয়ে করাবো সেটা নিয়ে রিসার্চ শুরু করলাম। বিজনেস ফর্মেশন, ইআইএন, ভার্চুয়াল এড্রেস, সবকিছুর জন্য রিলায়েবল প্লেস খুজতে হবে।

খোজ পেলাম ফার্স্টবেজের। অল-ইন-ওয়ান প্যাকেজ প্রোভাইড করছে এরা। বেশকিছু কেস-স্টাডি পরলাম, তাদের সাপোর্টে প্রত্যেকটা এজেন্টকে সেই পরিমান জ্বালাইলাম। অবশেষে একটা বিজনেস রেজিস্টার করে ফেললাম। সবকিছু দেখলাম সুন্দর করে হয়ে গেলো, তাই আরেকটা বিজনেস সেটাপ করলাম। তাদের সার্ভিসে আমি সম্পুর্নভাবে সন্তুষ্ট।

ফার্স্টবেজ রিসেন্টলি তাদের প্রাইসিং এ হিউজ চেঞ্জ এনেছে। ফরমেশন প্রসেসের খরচ বাড়ানো ছাড়াও, তারা এখন মেইলিং এড্রেসের জন্য ৩৫ ডলার প্রতি মাসে চার্জ করে। খরচ যদি কমাতে চান তাহলে সাজেস্ট করবো wyomingllcattorney.com এর মাধ্যমে বিজনেস ফর্ম করতে। আমি যখন বিজনেস ফর্ম করেছি, ফার্স্টবেজ এদের কাছ থেকেই আউটসোর্স করতো। এদের দিয়ে করালে মোটামুটি এই ব্লগে দেয়া প্রাইসিং এ বিজনেস ফর্মেশন এবং মেইনটেনেন্স করতে পারবেন।

ফার্স্টবেজঃ

ফার্স্টবেজ নিজেরা ফর্মেশন, রেজিস্ট্রেশন, এপ্লিকেশন, এগুলা করে না। এরা কয়েকটি লোকাল এজেন্সির সাথে পার্টনারশিপে আছে, ওদেরকে দিয়ে করায় এবং দৌড়াদৌড়ি করে। আপনি অন্য এজেন্সি দিয়ে করাতে পারেন, ২০-৩০ ডলার সেভ হবে, বাট সব আপনাকে ম্যানেজ করতে হবে। আমি এই দৌড়া-দৌড়ির ঝামেলাটা ফার্স্টবেজের উপরে ছেড়ে দেয়াটাকেই স্মার্ট ডিসিশন বলে মনে করি।

“STARTSOLAYMANXUR1041A1” কুপন ইউজ করলে $65 ডিস্কাউন্ট পাবেন।

ইয়ার্লি ফিঃ

ইয়ার্লি ফি টা ফার্স্টবেজ নিবে না। বিজনেস ফর্মেশন শেষ হয়ে গেলে, ফার্স্টবেজের সাথে আপনার সম্পর্ক শেষ। তারা আপনাকে একটা রেজিস্টার্ড এজেন্ট এসাইন করে দিবে। সেই এজেন্টেই আপনার বিজনেসের লিগ্যাল সামলাবে। রেজিস্টার্ড এজেন্ট ফি প্রতিবছর $49, এটা প্রথমবছর ফ্রি পাবেন।

আর এনুয়াল রিপোর্ট ফাইল ফি $50 ডলার। প্রতিবছর এজেন্টকে $99 পে করে দিবেন, আর এজেন্টই সব করে দিবে।

রেজিস্ট্রেশন শুরুঃ

বিজনেস রেজিস্টার করার আগে এখানে সার্চ করে দেখে নিন আপনার বিজনেস নেম এভাইলেবল আছে কিনা। এভাইলেবল থাকলে চলে যান ফার্স্টবেজে।

https://www.firstbase.io

Get Started বাটনে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন উইজার্ডে চলে যান।

ফার্স্টবেজ হোমপেজ

বিজনেস টাইপ হিসেবে LLC সিলেক্ট করুন।

বিজনেস টাইপ

স্টেট সিলেক্ট করুন Wyoming.

ফরমিং স্টেট

বিজনেসের নাম এবং এক বাক্যে কি ধরনের বিজনেস এটা, সেটা উল্যেখ করুন। এখানে খেয়াল রাখবেন, যেই নাম দিবেন, এটাই আপনার বিজনেস লিগ্যাল নেম হবে।

বিজনেস ইনফো

বিজনেসের ওনার এবং কার কতো শেয়ার সেটা উল্যেখ করে দিন। পার্টনার না থাকলে, নিজের নাম দিয়ে ১০০% শেয়ার দিয়ে দিন।

বিজনেস ওনার

আপনার বাংলাদেশের মেইলিং এড্রেস দিন এখানে।

পার্সোনাল ইনফো

আপনার নাম এবং ফোন নাম্বার (বাংলাদেশেরটা দিতে পারবেন)। SSN or ITIN এর ফিল্ডে নো দিয়ে দিন।

পার্সোনাল ইনফো

সকল তথ্য দিয়ে ফার্স্টবেজে সাইনআপ সম্পুর্ন করুন। ফার্স্টবেজে সাইনআপ করে। লগিন করলে, Pay to start progress বাটন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন। আপনার ইউএস বিজনেস ফরমেশনের কাজ শুরু হয়ে যাবে।

যেই ইমেইল দিয়ে ফার্স্টবেজ একাউন্ট করেছিলেন, সেটাতে নজর রাখবেন। বেশ কয়েকটা ইমেইল আসবে। ইআইএন এর জন্য আপনার সাইন নেয়ার জন্য ইমেইল করবে একটা, সাইন না করলে প্রসেস থেমে থাকবে।

সব স্টেপ শেষ হয়ে গেলে, আপনাকে এজেন্টের সাইটে একাউন্ট করে দিবে একটা। সেখান থেকেই এরপর সবকিছু করবেন। ওখানে আপনার ভার্চুয়াল এড্রেসের ডিজিটাল ইনবক্স পাবেন। আপনার ঠিকানায় আসা চিঠিগুলো সেখানে পাবেন।

কতদিন লাগবেঃ

LLC বিজনেস ফর্মেশন সাধানত ২-৩ দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। মেইলে এবং ফার্স্টবেজের ড্যাশবোর্ডে বিজনেস ফরমেশন সার্টীফিকেট পেয়ে যাবেন।

সময় লাগে ইআইএন হতে, ওরা বলে থাকে আপ টু ২০ দিন লাগবে। আমার প্রথম বিজনেস রেজিস্ট্রেশনে ৮ দিন লেগেছে ইআইএন পেতে। পরেরটা কোভিড-১৯ এর লকডাউনে পরে ২২ দিন লেগেছে।

ব্যাংক একাউন্ট ওপেনিংঃ

ব্যাংক একাউন্ট করতে ইআইএন লাগে, সো ইআইএন এর জন্য আগে অপেক্ষা করতে হবে। ইআইএন হয়ে গেলে, ফার্স্টবেজ আপনাকে মারকুরিতে একটা একাউন্ট করে দিয়ে আরো কয়েকটা স্টেপ ফিলাপ করার লিংক দিয়ে দিবে। সেখানে আপনি আপনার পার্সোনাল ইনফোরমেশন এবং আইডেন্টিটি ভেরিফাই করবেন।

ব্যাংক একাউন্ট এপ্রুভ হয়ে গেলেই আপনার বিজনেসের ঠিকানায় কার্ড পাঠিয়ে দিবে। আর সাথে সাথেই আপনি একাউন্ট ইউজ করতে পারবেন। ভার্চুয়াল কার্ড ক্রিয়েট করে খরচও করতে পারবেন।

ফিজিক্যাল কার্ড

কার্ড আপনার বিজনেস এড্রেসে পৌছালে, আপনার এজেন্ট আপনাকে মেইল করে জানতে চাইলে কার্ডের খাম কোথায় ফরয়ার্ড করবে। তার সাথে ডিসকাস করে শিপিং চার্জ পে করে কার্ড দেশে নিয়ে আসতে পারবেন।

বাৎসরিক খরচ এবং রিনিউয়ালঃ

স্টেট ফি, এক বছরের এজেন্ট ফি এবং এনুয়াল রিপোর্ট সাবমিশন সার্ভিস চার্জ সব মিলিয়ে বাৎসরিক খরচ হবে ১৪৯ ইউএস ডলার। এনুয়াল রিপোর্ট ফাইল করতে হবে আপনি যে মাসে কোম্পানি রেজিস্টার করেছেন, প্রতি বছর সে মাসের এক তারিখের মধ্যে। এই সার্ভিস প্রোভাইড করবে আপনার এজেন্ট। ডিউ ডেট আসার আগেই আপনার এজেন্ট আপনাকে মেইল করে রিমাইন্ডার দিয়ে দিবে।

রিনিউয়াল প্রসিডিউরঃ
আপনার এজেন্ট সাইটে লগিন করে মেনু দেখুন রিনিউ সার্ভিস অপশন আছে। রিনিউ অপশনে গেলে কোম্পানি সিলেক্ট করতে বলবে। কোম্পানি সিলেক্ট করে নেক্স পেজে যাওয়ার পর “Options for COMANY NAME” সিলেক্ট করলে রিকুয়ার্ড সার্ভিসগুলি সিলেক্ট হয়ে যাবে। একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে পেমেন্ট করে ফেলুন।

পেমেন্টের পর কিছু কোশ্চেনিয়ার আসবে আপনার কোম্পানির ব্যাপারে। যেমনঃ কোম্পানির কোন এসেট আছে কিনা। সেগুলা এন্সার করে দিন, আপনার কাজ শেষ। আপনার এজেন্ট এনুয়াল রিপোর্ট তৈরি করে সাবমিট করে দিবে।

উপসংহারঃ

বিজনেস এড্রেস, ইআইএন এবং ব্যাংক একাউন্ট ইউজ করে যেকোনো পেমেন্ট গেটওয়েতে মার্চেন্ট একাউন্ট করতে পারবেন। দুঃখের সংবাদ হলো, পেপাল একাউন্ট করতে পারবেন না এই পদ্ধতিতে। পেপাল এখন আর শুধুমাত্র EIN নিয়ে সন্তুষ্ট হয় না।

বিজনেস ফর্মেশন করার আগে একটু রিসার্চ করে নিন। লিগ্যাল বিষয়ে শুধুমাত্র কোন ব্লগ পরে ডিসিশন না নেওয়াই ভালো। ফার্সবেজের সাপোর্টে নক করে আপনার প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে পারেন। এখানে কমেন্ট করলে যতটুকু পারি সাহায্য করার চেষ্টা করবো।

আপনার বিজনেসের জন্য শুভকামনা রইলো।

এই টপিকের আরও কিছু পোস্টঃ

© সোলায়মান হায়দার