আমার মা এবং আজকের আমি হয়ে ওঠার পেছনের ৮০০ টাকা

বাংলা ব্লগআমার কথা১৪ মে, ২০১৭

আমার মা এবং আজকের আমি হয়ে ওঠার পেছনের ৮০০ টাকা

২০১৭ সাল, আজকে আমি নিজেকে সফল বলে দাবি করতে পারি। মহান আল্লাহ্‌র রহমতে সকল অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। নিজের ও পরিবারের যেকোনো ইচ্ছা সাথে সাথে পূরণ করতে পারি। কিন্তু এমনটা নাও হতে পারতো, যদি আমার মা ৫-৬ বছর আগে মাসে ৮০০ টাকা না দিত।

৬-৭ বছর আগে যখন প্রবল আগ্রহ নিয়ে কাজ শেখা শুরু করি, তখন এখনকার মতো চাইলেই এতো রিসোর্স পাওয়া যেতো না। ইন্টারনেট ঘেটে ঘেটে রিসোর্স খুজতে হতো। যেহেতু মফস্বলে থাকতাম, তাই ব্রডব্যান্ড ছিল না। ইভেন কয়েক মাস আগেও ছিল না। বাধ্য হয়ে নিজেই ব্রডব্যান্ড বিজনেস শুরু করি এখানে। যাই হোক, তখনকার একমাত্র ভরসা ছিল, সেকন্ড জেনারেশনের মোবাইল ব্রডব্যান্ড। যা দিয়ে কাজ করা কেমন কস্টের তা শুধুমাত্র যারা আমার মতো পরিস্থিতিতে ছিল, শুমাত্র তারাই জানে।

তখন ৮০০ টাকায় রবির আনলিমিটেড ইন্টারনেট প্যাক ছিল, আমি সেটাই ব্যবহার করতাম। কিন্তু সেই ৮০০ টাকা মাস যোগাড় করা যে কীরকম কষ্টের ছিল, তা আমি, আমার মা আর উপরঅলা জানেন। আমার আম্মু কিন্ডার গার্ডেনের টিচার ছিলেন, মটামুটি ১.৫ থেকে ২ হাজারের মতো বেতন পেতেন। সেখান থেকে আমার পড়াশোনা, ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা সাথে সংসারের খরচে আব্বুকে সাহায্য। সেখান থেকে কিভাবে প্রতিমাসে ৮০০ টাকা করে আম্মু বের করতেন যা আজো আমি বুঝতে পারি না। অই ৮০০ টাকাই ছিলও আমার কাজ শেখার একমাত্র উপায়।

সত্যি কথা বলতে কি, আমার পক্ষে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট এফরড করা সম্ভব ছিলও না। তারপরেও আমার মা তা আমাকে দিয়েছেন। কম্পিউটার কেনার পিছনেও আমার মায়ের হাত ছিলও, যা আরেকদিন বলবো।

মাস শেষ হলে ইন্টারনেট বিল চাইতে পারতাম না লজ্জায়। মাসে মাসে টাকা নিচ্ছি কিন্তু ফলাফল কিছুই দেখাতে পারছি না। মাঝে মাঝে এমন হতো ২ দিন ধরে ইন্টারনেট নেই, আম্মুকে বলতাম না। কিন্তু ঠিকই আম্মু বুঝে গিয়ে টাকা দিয়ে দিতও।

ধীরে ধীরে আমার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ৮০০ টাকায় কেনা ইন্টারনেটের জায়গায় এখন আমি একজন আইএসপি। কিন্তু সেই ৮০০ টাকার ইন্টারনেটের সাথে এখনকার ৫এম্বিপিএস এর লাইনও পারবে না। কারন, সেই ৮০০ টাকার ২জি ইন্টারনেটে মিশে ছিলও আমার আম্মুর ভালোবাসা।

এই টপিকের আরও কিছু পোস্টঃ

© সোলায়মান হায়দার