ফেসবুক ইজ ওয়েস্ট অব টাইম

বাংলা ব্লগসোশ্যাল মিডিয়া৯ মার্চ, ২০১৮

ফেসবুক ইজ ওয়েস্ট অব টাইম

সামাজিক যোগাযোগের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হল ফেসবুক। কিন্তু এটা কি আমরা সঠিকভাবে ব্যাবহার করতে পারছি? এটা কি আমাদের সময় অপচয়ের যায়গা হিসেবে পরিনত হয় নি?

টাইটেল দেখে অনেকেই মেজাজ খারাপ করে ফেলেছেন। তাদের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে সম্পূর্ণ ব্লগটি পড়ুন। একটু ভাবুন আর বুঝুন, আমরা কি আমাদের মুল্যবান সময়গুলি অপচয় করছি না?

ডিসক্লেইমারঃ আমিও অন্যদের মতই, আমাকে আলাদা ভাববেন না। অন্যদের মত জন্যেই অপচয়টা বুঝতে পারছি। এই ব্লগে লেখা কোন তথ্য যদি কারো সাথে মিলে যায়, সেক্ষেত্রে লেখক দায়ী থাকবে না। সেটার জন্য আপনিই দায়ী।

কিছুদিন আগে ফেসবুকের জনপ্রিয় একটা গ্রুপে একটা পোষ্ট দেখেছিলাম, ইন্টারনেট লাইন দেয়ার তারের নাম কি? গ্রুপটি জনপ্রিয় হওয়ায় প্রচুর কমেন্ট এসেছিলো এবং পোষ্টদাতার কমপক্ষে ৩-৪ ঘন্টা ব্যায় হওয়ার কথা কমেন্টগুলির উত্তর দিতে। কিন্তু এই তথ্যটি পেতে ৩০ সেকেন্ডের বেশী সময় ব্যায় করতে হত না। গুগলে এই প্রশ্নটি লিখে খুজলে কয়েক সেকেন্ডেই তারের নামগুলি বেরিয়ে আসতো, সাথে নিয়ে আসতো এই সম্পর্কিত আরো তথ্য। ফলে অনুসন্ধানকারীর মগজে নতুন কিছু তথ্য ঢুকত।

মাঝে মাঝে দেখা যায় পোষাক কিনতে যেয়ে কয়েকটা ছবি তুলে ফেবুকে আপলোড দেয় কেউ কেউ, সাথে প্রশ্ন থাকে এরকম, “বন্ধুরা কোনটা কিনবো?”। পোষাক সম্পূর্ণ নিজের রুচির ব্যাপার, কাছের মানুষ বা যাকে নিয়ে শপিং করতে গেছেন তাকে প্রশ্ন করেন। এটা নিয়ে গনভোটের দরকার আছে? এটাতে কোন সমস্যা খুজে পাচ্ছেন না? সমস্যা বের করে দেই। আপনি ফোটো আপলোড করার সাথে সাথে মন্তব্য আসা শুরু হবে, আপনিও উত্তর দেয়া শুরু করবেন। ফলে একটা কভারসেশন শুরু হয়ে যাবে আপনার পোষ্টে। দোকানদার বিরক্ত হবে, শপিং সঙ্গী বিরক্ত হবে এবং আপনার প্রচুর সময় নষ্ট হবে।

জীবন গঠনে সময়ের মুল্য অনেক বেশী। এটা যারা বুঝতে পারে, তারাই আজ সমাজের উপরের লেভেলে অবস্থান করছে। ফেসবুক আপনাকে ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করতে সাহায্য করবে না। এটাকে শুধুই একটা নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিন, এন্টারটেইনমেন্ট বা সময় কাটানোর যায়গা হিসেবে নয়।

কিছু গ্রুপে মাঝে মাঝে দেখা যায় রাত ১২টা ১টার দিকে পোষ্ট হয়, বন্ধুরা কে কে জেগে আছো আসো আড্ডা দেই। কেনো ভাই/বোন? পৃথিবীর সবার সাথেই কি আড্ডা দেয়া যায়? আড্ডা তাদের সাথে দেয়া যায়, যাদের আমরা পারসোনালি চিনি এবং যাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সমাজের উপাদানগুলিকে জোর করে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ঢুকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। একজনকে বাস্তবে চিনি না জানি না, তার সাথে আড্ডা দেয়ার কি আছে? তাকে প্রতিদিন হাই/হ্যালো, কেমন আছেন, সালাম, ইত্যাদি মেসেজ পাঠিয়ে সময় নষ্ট করার কি খুব দরকার আছে?

আরেকদল আছে, কথায় কথায় লাইভে আসে। লাইভে আসার আগে একবার ভাবুন, আপনি যেই বিষয় নিয়ে কথা বলবেন সেটা আপনার ফ্রেন্ডলিস্টের মানুষ* শুনতে ইচ্ছুক কিনা। আপনি লাইভে এসে বলেন, হাই বন্ধুরা কেমন আছো? অনেকদিন পর লাইভে আসলাম, কেউ কি শুনতে পাচ্ছেন… ব্লা ব্লা ব্লা…। আসলে আপনি কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে লাইভে আসেন নি, আপনি এসেছেন আপনার সময় নষ্ট করতে। যেটা আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগাতে পারতেন।
*ফ্রেন্ডলিস্টের মানুষ বলেছি, কারন এখনকার ফ্রেন্ডলিস্টে বন্ধু খুব একটা থাকে না।

আরেকটা ক্যাটাগরি আছে আবেগপ্রবন ক্যাটাগরি। তাদের কাজই হচ্ছে আবেগী স্ট্যাটাস দেয়া। আব্বা মেরেছে, রাগ করে ভাত খাইনি, বড্ড একা একা লাগছে, মরে যেতে ইচ্ছে করে, ইত্যাদি টাইপের স্ট্যাটাস দিয়ে তাদের টাইমলাইন ভরা। ফেসবুকে সময় কমিয়ে দিয়ে বাস্তব জীবনে সময় বারিয়ে দিন, এসব সমস্যা থাকবে না।

ট্যাগ সন্ত্রাসীদের কথা না বললেই নয়। তাদের কাজই হচ্ছে হাবিজাবি যেটাই পোষ্ট করুক না কেনো, যতজনকে পারা যায় ট্যাগ করে দিবে। ট্যাগ এর অর্থ না জেনেই যে একজনকে ট্যাগ করে যাচ্ছেন, সে আপনাকে মনে মনে গালি দিচ্ছে সেটা জানেন? ইদানিং আরেক যন্ত্রনা হাজির হয়েছে তা হচ্ছে, মেনশন করুন আপনার সেই বন্ধুকে…

কিছু মানুষ আছে যারা খালি কোন জাতিগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার এর ফুটেজ শেয়ার করে বেড়ায়। করুক তাতে সমস্যার কিছু নেই, কিন্তু সমস্যাটা হল তারা ভুল তথ্য ছড়ায়। যখন যেই গোষ্ঠীর উপর অত্যাচার চলে, তখন সকল অত্যাচারের ভিডিওই অই গোষ্ঠীর বলে চালিয়ে দেয়। এই ভিডিও শেয়ার করে, সেই জাতির কোন উপকার আপনি করতে পারছেন? এসব নিউজ প্রচারের জন্য মিডিয়া তো আছেই। শুধু শুধু আপনার মুল্যবান সময় কেনো নষ্ট করছেন?

আরেকটা ট্রেন্ড আছে, যেটা বেশীরভাগ মানুষই করে। আপনি কবে মারা যাবেন, আপনি বড় হয়ে কি হবেন, আপনার বাচ্চা দেখতে কেমন হবে, ইত্যাদি। একবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেন, কোন সফটওয়্যার কি এই উত্তরগুলি দিতে পারবে? মানছি তারা নিখাদ বিনোদনের জন্যই করে, কিন্তু সারাদিন এটার পিছনে লেগে থেকে সকল প্রশ্নের উত্তর বের করতে চাওয়াটা কি সময়ের অপচয় নয়?

আরেক দল আছে, কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চায়। যেকোনো সমস্যা হলেই, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অত্যন্ত হাস্যকর ব্যাপার, প্রধানমন্ত্রী কি আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন? আপনি স্ট্যাটাস দিয়ে কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন? আপনার যদি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ একান্তই দরকার হয়, আপনি সঠিক উপায়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করুন বা কথা বলুন। এখানে বলতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী দেখা দিবেন না। তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলে অবশ্যই দেখা করবেন। আপনার বাসায় পানি আসে না, সেটার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আশা করতে পারেন না। আরেকটা কথা, এটা বাংলাদেশ। এখানে মন্ত্রীরা সামাজিক মাধ্যমে জনগনের প্রশ্নের উত্তর দিতে আসে না।

আপনি ফেসবুক চালান, আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু লাইফ নিয়ে যখন হা-হুতাস করে স্ট্যাটাস দেন, সেটা আমার ফিডেও মাঝে মাঝে আসে। মনোযোগ এবং সময় দিন সেটাতে, যেটাতে আপনার ভবিষ্যৎ রয়েছে। ফেসবুক চালাবেন, নেটওয়ার্কিং এর জন্য চালাবেন, বিভিন্ন মানুষকে জানার জন্য চালাবেন। কিন্তু সেটা অবসর সময়ে চালাবেন। আপনার ক্যারিয়ার আপনাকেই বিল্ড করতে হবে এবং সেটা ফেসবুক চালিয়ে সম্ভব না। দিনে সরবচ্চ এক ঘন্টা ব্যয় করুন ফেসবুকে বাকি সময়টুকু পড়াশোনা করুন, নিজের স্কিল বাড়ান। নিজের জীবন গড়ে নেয়ার সময় খুবই সীমিত, এই সময়টুকু ফেসবুকে অপচয় করবেন না।

আমার কথাগুলি অনেকের তিতা লাগতে পারে। কিন্তু দিন শেষে আপনার সংসার আপনাকেই চালাতে হবে। ফেসবুকে ফ্রেন্ডরা আপনার সংসারের বাজার করে দিবে না। ফেসবুকে ৫০০ টাকা কামানোর সিস্টেমটাও ভুয়া। তাহলে, ফেসবুক আপনাকে কি দিচ্ছে? ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, আপনার অত্যন্ত মুল্যবান সময়টুকু কি অপচয় করবেন, নাকি সঠিক কাজে সঠিক সময়ে ব্যবহার করবেন?

এই টপিকের আরও কিছু পোস্টঃ

© সোলায়মান হায়দার